Kids Zone

  • Replace This Text With Your Featured Post 1 Description.
  • Replace This Text With Your Featured Post 2 Description.
  • Replace This Text With Your Featured Post 3 Description.
  • Replace This Text With Your Featured Post 4 Description.

Saturday, June 10, 2017

একরোখা শিশু সামলাবেন কীভাবে?

 
নয় বছরের (ছদ্মনাম) নিয়ে তো প্রায়ই বিপদে পড়তে হয় ওর বাবা-মায়ের। শপিং মলে গেলে কোনো কিছু কেনা তার চাই-ই চাই। আর সেটা না কিনে দিলে মাটিতে গড়াগড়ি। সবার সামনেই চিৎকার, কান্নাকাটি—সে এক হুলুস্থুল অবস্থা। আদর দিয়ে, ধমক দিয়ে, বুঝিয়ে—নানাভাবেই চেষ্টা করে দেখেছেন, কোনোভাবেই তমালকে বোঝানো যায় না। ফলে চাহিদামতো জিনিস তাকে কিনে না দিয়ে কোনো উপায়ও থাকে না।
অপর দিকে ছয় বছরের ছোট্ট মিথিলা (ছদ্মনাম) খুব মিষ্টি হলেও খাওয়া, পড়া সবকিছুতেই তার জেদ ধরা চাই। একবার না বললে কোনোভাবেই যেন সেটা হ্যাঁ হবে না। মনোবিজ্ঞানে কিছু শিশুকে বলা হয় ‘সহজে মানানো যায় না এমন শিশু’ বা ‘ডিফিকাল্ট চাইল্ড’। ১০ শতাংশ শিশু এমন হয়ে থাকে। এ ধরনের বাচ্চারা অল্পতেই উত্তেজিত হয়। একরোখা হয়। সহজে কথা শোনে না বা সন্তুষ্ট হয় না। মনোবিজ্ঞানী চেস ও থমাসের মতে, ৪০ শতাংশ শিশুকে বলা হয় ‘সহজে মানানো যায় এমন শিশু’। যাদের খাওয়া, ঘুম, বাথরুম ইত্যাদি সবকিছুই একধরনের নিয়মের মধ্যে থাকে। এরা যেকোনো কথা সহজে শোনে। এ দুই ধরনের বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ থাকে বাকি ৫০ শতাংশ শিশুর মধ্যে।
একরোখা ভাব বা যেকোনো কিছু নিয়ে জেদ করা অনেক শিশুরই বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য। কোনো কিছু চাইলে সেটা দিতেই হবে, যেকোনো কিছুতেই তারস্বরে চেঁচানো, জিনিসপত্র নষ্ট করা ইত্যাদি তাদের যেন জেদেরই বহিঃপ্রকাশ।
শিশুদের জেদ কেন হয়—এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, জন্মগতভাবে পাওয়া বৈশিষ্ট্য এবং চারপাশের পরিবেশের প্রভাবেই বিকশিত হতে থাকে শিশুর মনের গঠন। অর্থাৎ, তার সঙ্গে আমাদের আচরণ কেমন হচ্ছে, তার কোনো ব্যবহার বা আচরণ আমাদের মাধ্যমে অজান্তে উৎসাহ পাচ্ছে কি না, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে তার মেলামেশা, চারপাশে সে কী দেখে বড় হচ্ছে ইত্যাদি নানা কিছুই প্রভাব ফেলে তার মনে। এরই প্রতিফলন দেখি শিশুর আচরণে।

মনোবিজ্ঞানের একটা নিয়ম হলো, সন্তানের যেসব আচরণে মা-বাবা মনোযোগ দেবেন, সেসব আচরণ সে বারবার করবে। এই মনোযোগ যেমন আমরা আদর বা প্রশংসা করা, দাবি পূরণ করার মাধ্যমে দিতে পারি, তেমনি ‘বকা দেওয়া’, ‘বোঝানো’র মাধ্যমেও হতে পারে। যেমন, কোনো বাচ্চা কোনো কিছু কেনার জন্য জেদ করলে তাকে সেটা কিনে দিলে তার জেদ করার প্রবণতা আরও বাড়বে।
আবার কেউ যদি কোলে ওঠার জন্য মাটিতে গড়াগড়ি দেয় আর কেউ তাকে কোলে তুলে নেয়, তাহলে তার গড়াগড়ি দেওয়ার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণটি মনোযোগ পাবে। পরে এ আচরণটি আরও বাড়বে। এমনকি শিশুদের দুষ্টুমি নিয়ে বা জেদ নিয়ে তাদের সামনে অন্যদের সঙ্গে গল্প করলেও শিশুর এসব আচরণে পরোক্ষভাবে উৎসাহ দেওয়া হয়।


সন্তান জিনিসপত্র নষ্ট করলে ওর কিছু চাহিদা কম পূরণ করা ভালো। মডেল: ফারহানতাহলে একরোখা শিশুদের সামলাতে কী করা উচিত? শিশু যখন জেদ করে সবার সামনে কান্নাকাটি করতে বা গড়াগড়ি দিতে থাকবে, তখন তার দাবি না মেটালে সামলাবেন কীভাবে? অথবা জেদ করে যখন না খেয়ে থাকবে, তখন তার ইচ্ছা পূরণ না করেই বা উপায় কী?
আচরণ যেমন মনোযোগ দিলে বাড়ে, আবার যেকোনো ব্যবহার, আচরণ যদি ক্রমাগত উপেক্ষা করা হয়, তাহলে সেসব আচরণ কিন্তু কমে যাবে।
সুতরাং শিশুর কোনো আচরণ পছন্দ না হলে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করুন। অর্থাৎ, বাচ্চা জেদ করলে তাকে বকা দেওয়া, বোঝানো, দাবি পূরণ করা, তাকে কটাক্ষ করা ইত্যাদি থেকে নিজেকে বিরত রাখুন এবং সম্পূর্ণ উপেক্ষা করুন। ধৈর্য ধরে দৃঢ়তার সঙ্গে ক্রমাগত যেকোনো জেদে এমন আচরণ করতে পারলে শিশু বুঝে যাবে যে জেদ করে কোনো কিছু আদায় করা যায় না। ছোটখাটো জেদকে প্রশ্রয় না দিয়ে এ অভ্যাসটি শুরু করুন ঘর থেকেই।
একটা জনপ্রিয় প্রশ্ন হলো, ক্ষেত্রবিশেষে শিশুরা যখন সীমা ছাড়িয়ে যায় (যেমন বেয়াদবি করা, জিনিসপত্র নষ্ট করা ইত্যাদি), তখন শাস্তি কতখানি গ্রহণযোগ্য? উত্তর হলো, ক্ষেত্রবিশেষে শাস্তি সাময়িকভাবে কার্যকর হলেও শিশু এ ক্ষেত্রে কোনো শিক্ষা গ্রহণ করে না। বরং বারবার শাস্তি দিলে শাস্তির গুরুত্ব কমে যায়। শিশুমনে একধরনের নেতিবাচক আবেগ তৈরি হয়।
সুতরাং শাস্তিযোগ্য কোনো কাজে শাস্তির পরিবর্তে সন্তানের কিছু সুবিধা (যেমন আদর করা, কথা বলা, প্রশংসা করা, উপহার দেওয়া) ইত্যাদি সাময়িকভাবে কমিয়ে ফেলুন।
কী করবেন?* শিশুর যেকোনো ভালো কাজে প্রশংসা করুন।
* পড়ালেখার পাশাপাশি সাধারণ আচরণ, নিয়ম-কানুন শেখান।

* সামাজিক পরিবেশে কোন ধরনের আচরণ গ্রহণীয় এবং কোনগুলো গ্রহণযোগ্য নয়, সেটা স্পষ্ট করে জানান।
* সমবয়সী শিশুদের সঙ্গে মিশতে দিন। তার জিনিসপত্র শেয়ার করতে শেখান।
* যেকোনো জেদ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করুন।

কী করবেন না?
* যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করুন।
* জেদে অতিরিক্ত বোঝানো, বকা দেওয়া বা তিরস্কার করবেন না।
* জেদ নিয়ে বাচ্চার সামনে অন্যদের সঙ্গে গল্প করবেন না।
* জেদ করে কোনো কিছু চাইলে সেই দাবি পূরণ করবেন না। স্বাভাবিকভাবে চাইলে তখন দেবেন।

মেখলা সরকার : মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা
প্রথম আলো

Sunday, March 19, 2017

শিশুরা কেন মিথ্যা বলে?

www.kidszonebd.blogspot.com
শিশুরা বানিয়ে কথা বলে প্রায়ই তবে মিথ্যা কথা বলা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলে সেটা অবশ্যই দুশ্চিন্তার বিষয় ধমক দিয়ে অথবা ভয় দেখিয়ে নয়, শিশুকে বুঝিয়ে দূর করুন সমস্যা একদিনে অভ্যাস দূর করাও সম্ভব নয় শিশুর বেড়ে ওঠার প্রতিটি মুহূর্ত তাকে নজরে রাখুন বুঝতে চেষ্টা করুন শিশু কেন মিথ্যা বলছে জেনে নিন শিশু কোন কোন কারণে মিথ্যা কথা বলে-  

বকা খাওয়ার ভয়ে
বাবা-মা পছন্দ করেন না হঠাৎ এমন কোনও কাজ করে ফেললে বকা খাওয়ার ভয়ে শিশু মিথ্যা বলতে পারে তাই শিশুকে শাসন করার পাশাপাশি বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখাও জরুরি যেন ভুল হয়ে গেলেও শিশু নির্দ্বিধায় সেটা বলতে পারে এতে করে পরবর্তীতে যেন একই ভুল না হয় সেজন্য বাবা-মা শিশুকে বোঝাতে পারবেন 

পড়াশোনা নিয়ে অতিরিক্ত চাপে থাকলে
এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে পড়াশোনা নিয়ে অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকলে শিশু মিথ্যা কথা বলে তাই শিশুকে পড়াশোনা নিয়ে ক্লান্ত হতে দেবেন না পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুকে খেলাধুলা করতে কিংবা গল্পের বই পড়তে উৎসাহ দিন

নিজেকে অবহেলিত মনে করলে
অনেক শিশু নিজেকে নিয়ে দ্বিধায় ভোগে বাবা-মায়ের বকা খেয়ে নিজেকে অবহেলিত মনে করতে থাকে এতে অন্যের কাছে নিজের সম্পর্কে বানিয়ে বানিয়ে কথা বলার প্রবণতা বাড়ে শিশুর অভ্যাস ত্যাগ সাহায্য করতে পারেন বাবা-মা নিজেই শিশু কোনও ভুল করলে বুঝিয়ে বলুন তাকে কখনও সবার সামনে বকাঝকা করবেন না 



এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন সাইকোলজি বিভাগের চাইল্ড সাইকোলজিস্ট ও ডেমনেস্ট্রেটর সাবরিনা মাহমুদ বলেন, শিশুরা বেশির ভাগ সময় আত্মরক্ষার উপায় হিসেবে মিথ্যা বলে। মা-বাবার নেতিবাচক প্যারেন্টিংয়ের কারণেও অনেক সময় মিথ্যা বলার অভ্যাস হয়।’

শিশুরা কেন মিথ্যা বলে ?
* শিশুরা বকা বা শাস্তির ভয়ে মিথ্যা বলে। যেমন স্কুলগামী শিশুদের হোমওয়ার্ক করা, খাবার খাওয়া, দুষ্টুমি করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে মিথ্যা বলার প্রবণতা বেশি থাকে।
* আমি কি সত্যটা বলব? সত্যটা শুনে যদি বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়? শিশুদের মনে এসব সংকোচবোধ তৈরি হয়। তাই সে মিথ্যা বলে নিজেকে ঝামেলামুক্ত রাখতে চায়।
* স্কুলগামী শিশুরা অনেক সময় সহপাঠীদের মাঝে নিজেকে আলাদাভাবে পরিচয় করাতে চায়। এ জন্য সে বানিয়ে বানিয়ে অনেক মিথ্যা গল্প করে। যেমন শিশুরা ভূতের গল্প, অদ্ভুত কোনো বীরত্বের কাহিনি ইত্যাদি বলে থাকে।
* মা-বাবা শিশুদের যথেষ্ট সময় না দিলে তারা দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। এ জন্য অনেক মিথ্যা বাহানা তৈরি করে। এভাবে মিথ্যা বলার প্রবণতা তৈরি হয়।
* অনেক সময় শিশুরা মনে করে সত্য বললে অন্য পক্ষ অখুশি হবে বা কষ্ট পাবে। যেমন কোনো বন্ধু একটি নতুন পেনসিল এনে জিজ্ঞাসা করল কেমন হয়েছে? যদি পেনসিলটি পছন্দ না-ও হয় তবুও সে বলে সুন্দর। কারণ অসুন্দর বললে বন্ধুটি কষ্ট পেতে পারে। এভাবে অন্যকে খুশি করার জন্য মিথ্যা বলার প্রবণতা তৈরি হয়।
* অনেক সময় মা-বাবাকে অনুকরণ করে শিশুরা মিথ্যা কথা বলা শেখে। যেমন মা-বাবা সন্তানকে মুখে বলছে 

মিথ্যা বলো না আবার তার সামনেই অন্য কাউকে মিথ্যা বলছে। যেমন ফোনে মিথ্যা বলা। কথা ও কাজের ভিন্নতা দেখে শিশু সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে পারে না এবং মিথ্যা বলা শেখে। ‘সোশ্যাল কগনেটিভ থিওরি’ অনুযায়ী এটিকে ‘রোল মডেলিং’ বলে।
* শিশুদের সত্য বলার সাহস জোগানো দরকার। আর এই দায়িত্ব প্রধানত মা-বাবারই। শিশু যখন মিথ্যা বলে, তখন কীভাবে তাকে সত্য বলতে উৎসাহিত করবেন।
* শিশু মিথ্যা বলছে এটি বুঝতে পারলে তাকে বকা না দিয়ে সরাসরি কথা বলুন। কারণ মিথ্যা বলার পেছনে তারও কিছু যুক্তি বা কথা থাকতে পারে। সেগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে এবং মিথ্যা বলা যে খারাপ সেটি ভালোভাবে বোঝান।
* অনেক মা-বাবা বোঝাতে গিয়ে উপদেশের ঝুড়ি খুলে বসেন। শিশুর জায়গা থেকে তাকে বুঝতে চান না। তাঁদের পছন্দ-অপছন্দ চাপিয়ে দেন। এগুলো শিশুর জন্য ক্ষতিকর। শিশুকে তার জায়গা থেকে ‘ইমপ্যাথি’ নিয়ে বোঝান।
* রাগ না দেখিয়ে বন্ধুসুলভ আচরণ করুন।
* শিশুর আবেগ স্পষ্টভাবে বলতে শেখান। যেমন তুমি কেমন আছ? এর উত্তরে ‘আমি ভালো আছি’ শেখানো হয়। এটি না করে সে সত্যিকারে যেমন বোধ করছে, সেটি বলতে শেখান।
* শিশুকে বোঝাতে গিয়ে লজ্জায় না ফেলা; বরং সহজ ও বন্ধুসুলভ আচরণই তাকে সত্য বলার সাহস দেবে।
* শিশুকাল থেকে গল্পের মাধ্যমে সত্যবাদিতা শেখানো। যেটি তার নৈতিকতা ও চরিত্র গঠনে সাহায্য করবে।
গ্রন্থনা: প্রিয়াংকা কুন্ডু

সুত্র প্রথম আলো ৩০/১১/ ২০১৬ আধুনা

Thursday, March 16, 2017

মা-বাবাকেও সরি বলতে হবে

www.kidszonebd.blogspot.com


খেলতে খেলতে বন্ধুকে ব্যথা দিয়েছে অন্তু ওর বয়স মাত্র সাত মা বারবার বলছেন, ‘সরি বলো, বন্ধুকে সরি বলোকিন্তু অন্তু ঘাড় গোঁজ করে বসেই রয়েছে, সরি আর বলছে না এই সরি বলা বা নিজের ভুল বুঝতে পারাটা কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিশুদের সরি বলতে শেখানোর কাজটা কিন্তু ছোটবেলা থেকে মা-বাবাকেই করতে হয় যাপিত জীবনে ছোট থেকে বড় যে কারও যেকোনো সময় ভুল হয়ে যেতেই পারে আবেগের বশে হঠাৎ করে এমন কিছু করে ফেলতে পারে বা বলে ফেলতে পারে যে কেউ, যার জন্য পরবর্তী সময়ে নিজে নিজেই অনুতাপে ভোগে কিন্তু মুখ ফুটে নিজের অনুতাপবোধটা প্রকাশ করতে পারে না একটা অহংবোধ এসে বাধা দেয় মনে হয় ভুল স্বীকার করে নিলে, ‘সরিবলে ফেললে আমি ছোট হয়ে যাব এই ধারণা থেকে মনে মনে অনুতপ্ত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরি বলাটা আর হয়ে ওঠে না বাবা-মা এই সরি বলার চর্চা থেকে যত দূরেই থাকুন না কেন, নিজের সন্তানের কাছে সরি শুনতে চান প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রে! সমস্যা হচ্ছে, শিশুরা যদি পরিবারে সমাজে এই ভুল স্বীকার করার আচরণটি না দেখে, তবে তাদের মধ্যেও জন্ম নেয় অহংবোধ তারাও সরি বলাটাকে পরাজয় বলে মনে করে ফলে আন্তব্যক্তিক সম্পর্কগুলো বাধাগ্রস্ত হয়, সামাজিক দক্ষতা কমতে থাকে কখনো কখনো ব্যক্তিত্বের সমস্যাও দেখা দিতে পারে
বাবা-মা সন্তানের কাছে সরি বলতেই পারেন বাবা-মায়ের কোনো একটি ভুল আচরণে সন্তানের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে অনেক সময় বাবা-মা নিজেদের ভুল বুঝতে পারলেওসন্তানের কাছে সরি চাইব’—এই ভাবনা থেকে কখনোই ভুল স্বীকার করেন না এতে ক্ষতি হয় দুইভাবে প্রথমত, বাবা-মায়ের ভুল আচরণটির কারণে সন্তানের মনে একটা ক্ষতির সৃষ্টি হয়, যেটি তার সামাজিক দক্ষতাকে কমিয়ে দেয় ব্যক্তিত্বের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে দ্বিতীয়ত, তার মধ্যে ভুল স্বীকার করার অভ্যাসটি গড়ে ওঠে না ভবিষ্যতে এই সন্তানটি কারও কাছে নিজের ভুল আচরণের জন্য সরি বলতে পারে না
সরি কেন বলব
সরিবললে সম্পর্কের বদ্ধ দরজা খুলে যায় কোনো কারণে দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলে তা কমিয়ে আনার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে বিনীতভাবে কোনো একজনের নিজের ভুল স্বীকার করে নেওয়া আর এই ভুল স্বীকার করার অভ্যাস কিন্তু এক দিনে গড়ে ওঠে না এটি ছোটবেলা থেকে চর্চা করে করে নিজের ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য হিসেবে গড়ে নিতে হয় সরি বলাটা যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম যাদের মধ্যে নিজের ভুল স্বীকার করে নেওয়ার গুণটি রয়েছে, তারা সবার আস্থাভাজন হয়ে ওঠে, অন্যদের তুলনায় তাদের ভুলগুলো অনেক সময় হালকাভাবে দেখা হয় সরি বলার মাধ্যমে আরেকজনের মনের আঘাত খানিকটা কমে আসতে থাকে
কীভাবে সরি বলবেন
মুখ দেহভঙ্গি: বলার সময় মুখ শরীরের ভঙ্গি বিনীত রাখুন ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে ভুল স্বীকার করাটা সমস্যাকে আরও উসকে দেওয়ার শামিল কেবল মুখের শব্দচয়নের মধ্য দিয়ে নয়, বরং আপনার শরীর আর বাচনভঙ্গির মধ্যেও যেন সরিবোধটি ফুটে ওঠে
সময় বেছে নিন: ভুল স্বীকার করার জন্য সঠিক সময় নির্বাচন করুন কখনো ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আবার কখনো ঘটনার খানিক পরে সরি বলাটা কার্যকরী পরিস্থিতি বিবেচনায় সঠিক সময় নির্বাচন করুন তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে ভুল স্বীকার করাটা বেশি কাজে দেয়
আত্মপক্ষ সমর্থন নয়: ভুল স্বীকার করার সঙ্গে সঙ্গে আপনি পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে পারেন আত্মপক্ষÿসমর্থন করে আপনার আচরণের পক্ষেÿসাফাই গাইবেন না
সমব্যথী হোন: আপনার ভুল আচরণের কারণে যিনি কষ্ট পেয়েছেন, তাঁর কষ্টের জন্য সমবেদনা বা করুণা প্রকাশ করবেন না বরং তাঁর প্রতি সমব্যথী হোন, সমমর্মিতা প্রকাশ করুন তাঁকে বুঝিয়ে বলুন যে তাঁর কষ্টটা আপনিও অনুভব করতে পারছেন
দায়িত্ব নিয়ে নিন: সামগ্রিক ঘটনার দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নিন তাতে করে আপনার ভুল স্বীকারটি আরও পোক্ত হবে
ভবিষ্যতের জন্য প্রতিশ্রুতি: ভবিষ্যতে আপনার দ্বারা এমন আচরণ আর ঘটবে না এমন প্রতিশ্রুতি দিন এবং এই প্রতিশ্রুতি মেনে চলবেন এমন অঙ্গীকার নিজের কাছেই করুন এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করুন
যদি মুখে বলতে না পারেন: নিজ মুখে ভুল স্বীকার করাটাই সবচেয়ে ভালো যদি সেটা করতে আপনি বিব্রতবোধ করেন, তবে অন্তত চিঠি লিখে, খুদে বার্তা পাঠিয়ে, -মেইল করে বা ছোট কোনো উপহারের মাধ্যমেও বলতে পারেন
সরিকে হালকা করবেন না: দায়িত্ব নিয়ে সরি বলুন এবং বুঝতে শিখুন যে আপনার আচরণকে সত্যিই পরিবর্তন করা প্রয়োজন ভুল স্বীকারকে কেবল মুখের কথায় সীমাবদ্ধ রেখে প্রতিনিয়ত হাজার হাজারবার সরি বলে এটিকে হালকা বা খেলো করে তুলবেন না
সুত্র প্রথম আলো ১৫//২০১৭

সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা