www.kidszonebd.blogspot.com |
Thursday, March 16, 2017
মা-বাবাকেও সরি বলতে হবে
খেলতে খেলতে বন্ধুকে ব্যথা দিয়েছে অন্তু। ওর বয়স মাত্র সাত। মা বারবার বলছেন, ‘সরি বলো, বন্ধুকে সরি বলো।’ কিন্তু অন্তু ঘাড় গোঁজ করে বসেই রয়েছে, সরি আর বলছে না। এই সরি বলা বা নিজের ভুল বুঝতে পারাটা কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের সরি বলতে শেখানোর কাজটা কিন্তু ছোটবেলা থেকে মা-বাবাকেই করতে হয়। যাপিত জীবনে ছোট থেকে বড় যে কারও যেকোনো সময় ভুল হয়ে যেতেই পারে। আবেগের বশে হঠাৎ করে এমন কিছু করে ফেলতে পারে বা বলে ফেলতে পারে যে কেউ, যার জন্য পরবর্তী সময়ে নিজে নিজেই অনুতাপে ভোগে। কিন্তু মুখ ফুটে নিজের অনুতাপবোধটা প্রকাশ করতে পারে না। একটা অহংবোধ এসে বাধা দেয়। মনে হয় ভুল স্বীকার করে নিলে, ‘সরি’ বলে ফেললে আমি ছোট হয়ে যাব। এই ধারণা থেকে মনে মনে অনুতপ্ত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরি বলাটা আর হয়ে ওঠে না। বাবা-মা এই সরি বলার চর্চা থেকে যত দূরেই থাকুন না কেন, নিজের সন্তানের কাছে সরি শুনতে চান প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রে! সমস্যা হচ্ছে, শিশুরা যদি পরিবারে ও সমাজে এই ভুল স্বীকার করার আচরণটি না দেখে, তবে তাদের মধ্যেও জন্ম নেয় অহংবোধ। তারাও সরি বলাটাকে পরাজয় বলে মনে করে। ফলে আন্তব্যক্তিক সম্পর্কগুলো বাধাগ্রস্ত হয়, সামাজিক দক্ষতা কমতে থাকে। কখনো কখনো ব্যক্তিত্বের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
বাবা-মা সন্তানের কাছে সরি বলতেই পারেন। বাবা-মায়ের কোনো একটি ভুল আচরণে সন্তানের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। অনেক সময় বাবা-মা নিজেদের ভুল বুঝতে পারলেও ‘সন্তানের কাছে সরি চাইব’—এই ভাবনা থেকে কখনোই ভুল স্বীকার করেন না। এতে ক্ষতি হয় দুইভাবে। প্রথমত, বাবা-মায়ের ভুল আচরণটির কারণে সন্তানের মনে একটা ক্ষতির সৃষ্টি হয়, যেটি তার সামাজিক দক্ষতাকে কমিয়ে দেয়। ব্যক্তিত্বের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। দ্বিতীয়ত, তার মধ্যে ভুল স্বীকার করার অভ্যাসটি গড়ে ওঠে না। ভবিষ্যতে এই সন্তানটি কারও কাছে নিজের ভুল আচরণের জন্য সরি বলতে পারে না।
সরি কেন বলব
‘সরি’ বললে সম্পর্কের বদ্ধ দরজা খুলে যায়। কোনো কারণে দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলে তা কমিয়ে আনার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে বিনীতভাবে কোনো একজনের নিজের ভুল স্বীকার করে নেওয়া। আর এই ভুল স্বীকার করার অভ্যাস কিন্তু এক দিনে গড়ে ওঠে না। এটি ছোটবেলা থেকে চর্চা করে করে নিজের ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য হিসেবে গড়ে নিতে হয়। সরি বলাটা যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। যাদের মধ্যে নিজের ভুল স্বীকার করে নেওয়ার গুণটি রয়েছে, তারা সবার আস্থাভাজন হয়ে ওঠে, অন্যদের তুলনায় তাদের ভুলগুলো অনেক সময় হালকাভাবে দেখা হয়। সরি বলার মাধ্যমে আরেকজনের মনের আঘাত খানিকটা কমে আসতে থাকে।
কীভাবে সরি বলবেন
মুখ ও দেহভঙ্গি: বলার সময় মুখ ও শরীরের ভঙ্গি বিনীত রাখুন। ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে ভুল স্বীকার করাটা সমস্যাকে আরও উসকে দেওয়ার শামিল। কেবল মুখের শব্দচয়নের মধ্য দিয়ে নয়, বরং আপনার শরীর আর বাচনভঙ্গির মধ্যেও যেন সরিবোধটি ফুটে ওঠে।
সময় বেছে নিন: ভুল স্বীকার করার জন্য সঠিক সময় নির্বাচন করুন। কখনো ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আবার কখনো ঘটনার খানিক পরে সরি বলাটা কার্যকরী। পরিস্থিতি বিবেচনায় সঠিক সময় নির্বাচন করুন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে ভুল স্বীকার করাটা বেশি কাজে দেয়।
আত্মপক্ষ সমর্থন নয়: ভুল স্বীকার করার সঙ্গে সঙ্গে আপনি পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে পারেন। আত্মপক্ষÿসমর্থন করে আপনার আচরণের পক্ষেÿসাফাই গাইবেন না।
সমব্যথী হোন: আপনার ভুল আচরণের কারণে যিনি কষ্ট পেয়েছেন, তাঁর কষ্টের জন্য সমবেদনা বা করুণা প্রকাশ করবেন না। বরং তাঁর প্রতি সমব্যথী হোন, সমমর্মিতা প্রকাশ করুন। তাঁকে বুঝিয়ে বলুন যে তাঁর কষ্টটা আপনিও অনুভব করতে পারছেন।
দায়িত্ব নিয়ে নিন: সামগ্রিক ঘটনার দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নিন। তাতে করে আপনার ভুল স্বীকারটি আরও পোক্ত হবে।
ভবিষ্যতের জন্য প্রতিশ্রুতি: ভবিষ্যতে আপনার দ্বারা এমন আচরণ আর ঘটবে না এমন প্রতিশ্রুতি দিন এবং এই প্রতিশ্রুতি মেনে চলবেন এমন অঙ্গীকার নিজের কাছেই করুন এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করুন।
যদি মুখে বলতে না পারেন: নিজ মুখে ভুল স্বীকার করাটাই সবচেয়ে ভালো। যদি সেটা করতে আপনি বিব্রতবোধ করেন, তবে অন্তত চিঠি লিখে, খুদে বার্তা পাঠিয়ে, ই-মেইল করে বা ছোট কোনো উপহারের মাধ্যমেও বলতে পারেন।
সরিকে হালকা করবেন না: দায়িত্ব নিয়ে সরি বলুন এবং বুঝতে শিখুন যে আপনার আচরণকে সত্যিই পরিবর্তন করা প্রয়োজন। ভুল স্বীকারকে কেবল মুখের কথায় সীমাবদ্ধ রেখে প্রতিনিয়ত হাজার হাজারবার সরি বলে এটিকে হালকা বা খেলো করে তুলবেন না।
সুত্র প্রথম আলো ১৫/৩/২০১৭
সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
1 comments:
নিউজ টা খুবই সুন্দর এই ধরণের নিউজ পড়তে ক্লিক করুন
Post a Comment