Saturday, January 28, 2017

ঘুম তাড়ানো ভূত



অনেক অনেক কাল আগের কথা। এক দেশে হঠাৎ করে এক আজব ভূতের আগমন ঘটে। সেই ভূত রাতের বেলা মানুষের ঘুমানোর সময় কাছে গিয়ে একটা মন্ত্র পড়ত। মন্ত্র পড়ার পরে সে গায়েব হয়ে যেত। আর মানুষ কাশতে শুরু করত। এইভাবে সে মানুষের ঘুম তাড়িয়ে দিত। সারা দিন কাজ করে বেচারা মানুষদের কেবল যখন ঘুম পেয়েছে, তখনই তারা কাশতে শুরু করত। দিনভর কাজকর্ম করে ঘরে ফিরে যদি রাতে না ঘুমানো যায়, তাহলে কি আর মন ঠিক থাকে?
সেই দেশের রাজা কত ওঝাকেই না ডাকলেন, কিন্তু ওঝারা শত চেষ্টায়ও কিছুই করতে পারল না। শেষে খবর এল, এক দেশে এক ভূত আছে, যে মানুষের কাশি দূর করে দেয়। রাজা তখন তাকেই ডাকলেন সাহায্যের জন্য। সে বিনা দ্বিধায় রাজি হয়ে গেল।
সে ছিল ভূতদের মধ্যে সবচেয়ে বড় যোদ্ধা। তো সে রাতের বেলা ঘুম তাড়ানো ভূতটির আগমনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, লুকিয়ে অদৃশ্য হয়ে।
একসময় ঘুম তাড়ানো ভূতটি এল। যোদ্ধা ভূতটাও অন্য একটি মন্ত্র বলার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। ঘুম তাড়ানো ভূত ও যোদ্ধা ভূত একসঙ্গে মন্ত্র শুরু করল এবং একসঙ্গে শেষ করল।
ঘুম তাড়ানো ভূতের অনেকক্ষণ ধরে মনে হচ্ছিল, কেউ এখানে আছে। তাই সে মন্ত্র বলা শেষ হওয়ার পরেও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল কাশির শব্দ শোনার জন্য।
যখন সে একটুও কাশির আওয়াজ শুনতে পেল না, তখন অবাক হলো। তার মনে ভয় ঢুকে গেল। ঠিক তখনই যোদ্ধা ভূত তার সামনে এল। ঘুম তাড়ানো ভূতটি যোদ্ধা ভূতকে দেখে গেল ভড়কে। সে আমতা-আমতা করে কোনোমতে বলল, ‘আপনি এখানে কী করছেন?’
‘তোকে মারতে এসেছি।’ হুংকার দিয়ে উঠল যোদ্ধা ভূত।
সঙ্গে সঙ্গে সে নিজের তির বের করে ধনুকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল এবং তির নিক্ষেপ করল। এই তির বিদ্ধ হয়ে ঘুম তাড়ানো ভূত বিকট শব্দে আর্তনাদ করে উঠল।
আশপাশের লোকজন সবাই ছুটে এল। তাদের কাশি থেমে গেছে। তাদের সঙ্গে রাজাও এলেন। রাজা বললেন, ‘তুমি আমার প্রজাদের জন্য যা করেছ, তা আমি কখনো ভুলব না। আমি তোমাকে আমার রিজার্ভ ফোর্সের সেনাপতি হিসেবে ঘোষণা করলাম। দেশে যখন কোনো দুর্যোগ হবে, তখন তোমাকে এগিয়ে আসতে হবে।’ যোদ্ধা ভূত রাজার কথায় সম্মতি জানাল।
সেই থেকে প্রজারা আবার সুখে শান্তিতে ঘুমাতে পারল। আর যোদ্ধা ভূত মহা সুখে সেই দেশে বাস করতে থাকল। আর অপেক্ষা করতে লাগল দেশের কোনো দুর্যোগে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।

তৃতীয় শ্রেণি, মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ
সুত্র প্রথম আলো

0 comments:

Post a Comment