Sunday, March 19, 2017

শিশুরা কেন মিথ্যা বলে?

www.kidszonebd.blogspot.com
শিশুরা বানিয়ে কথা বলে প্রায়ই তবে মিথ্যা কথা বলা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলে সেটা অবশ্যই দুশ্চিন্তার বিষয় ধমক দিয়ে অথবা ভয় দেখিয়ে নয়, শিশুকে বুঝিয়ে দূর করুন সমস্যা একদিনে অভ্যাস দূর করাও সম্ভব নয় শিশুর বেড়ে ওঠার প্রতিটি মুহূর্ত তাকে নজরে রাখুন বুঝতে চেষ্টা করুন শিশু কেন মিথ্যা বলছে জেনে নিন শিশু কোন কোন কারণে মিথ্যা কথা বলে-  

বকা খাওয়ার ভয়ে
বাবা-মা পছন্দ করেন না হঠাৎ এমন কোনও কাজ করে ফেললে বকা খাওয়ার ভয়ে শিশু মিথ্যা বলতে পারে তাই শিশুকে শাসন করার পাশাপাশি বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখাও জরুরি যেন ভুল হয়ে গেলেও শিশু নির্দ্বিধায় সেটা বলতে পারে এতে করে পরবর্তীতে যেন একই ভুল না হয় সেজন্য বাবা-মা শিশুকে বোঝাতে পারবেন 

পড়াশোনা নিয়ে অতিরিক্ত চাপে থাকলে
এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে পড়াশোনা নিয়ে অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকলে শিশু মিথ্যা কথা বলে তাই শিশুকে পড়াশোনা নিয়ে ক্লান্ত হতে দেবেন না পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুকে খেলাধুলা করতে কিংবা গল্পের বই পড়তে উৎসাহ দিন

নিজেকে অবহেলিত মনে করলে
অনেক শিশু নিজেকে নিয়ে দ্বিধায় ভোগে বাবা-মায়ের বকা খেয়ে নিজেকে অবহেলিত মনে করতে থাকে এতে অন্যের কাছে নিজের সম্পর্কে বানিয়ে বানিয়ে কথা বলার প্রবণতা বাড়ে শিশুর অভ্যাস ত্যাগ সাহায্য করতে পারেন বাবা-মা নিজেই শিশু কোনও ভুল করলে বুঝিয়ে বলুন তাকে কখনও সবার সামনে বকাঝকা করবেন না 



এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন সাইকোলজি বিভাগের চাইল্ড সাইকোলজিস্ট ও ডেমনেস্ট্রেটর সাবরিনা মাহমুদ বলেন, শিশুরা বেশির ভাগ সময় আত্মরক্ষার উপায় হিসেবে মিথ্যা বলে। মা-বাবার নেতিবাচক প্যারেন্টিংয়ের কারণেও অনেক সময় মিথ্যা বলার অভ্যাস হয়।’

শিশুরা কেন মিথ্যা বলে ?
* শিশুরা বকা বা শাস্তির ভয়ে মিথ্যা বলে। যেমন স্কুলগামী শিশুদের হোমওয়ার্ক করা, খাবার খাওয়া, দুষ্টুমি করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে মিথ্যা বলার প্রবণতা বেশি থাকে।
* আমি কি সত্যটা বলব? সত্যটা শুনে যদি বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়? শিশুদের মনে এসব সংকোচবোধ তৈরি হয়। তাই সে মিথ্যা বলে নিজেকে ঝামেলামুক্ত রাখতে চায়।
* স্কুলগামী শিশুরা অনেক সময় সহপাঠীদের মাঝে নিজেকে আলাদাভাবে পরিচয় করাতে চায়। এ জন্য সে বানিয়ে বানিয়ে অনেক মিথ্যা গল্প করে। যেমন শিশুরা ভূতের গল্প, অদ্ভুত কোনো বীরত্বের কাহিনি ইত্যাদি বলে থাকে।
* মা-বাবা শিশুদের যথেষ্ট সময় না দিলে তারা দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। এ জন্য অনেক মিথ্যা বাহানা তৈরি করে। এভাবে মিথ্যা বলার প্রবণতা তৈরি হয়।
* অনেক সময় শিশুরা মনে করে সত্য বললে অন্য পক্ষ অখুশি হবে বা কষ্ট পাবে। যেমন কোনো বন্ধু একটি নতুন পেনসিল এনে জিজ্ঞাসা করল কেমন হয়েছে? যদি পেনসিলটি পছন্দ না-ও হয় তবুও সে বলে সুন্দর। কারণ অসুন্দর বললে বন্ধুটি কষ্ট পেতে পারে। এভাবে অন্যকে খুশি করার জন্য মিথ্যা বলার প্রবণতা তৈরি হয়।
* অনেক সময় মা-বাবাকে অনুকরণ করে শিশুরা মিথ্যা কথা বলা শেখে। যেমন মা-বাবা সন্তানকে মুখে বলছে 

মিথ্যা বলো না আবার তার সামনেই অন্য কাউকে মিথ্যা বলছে। যেমন ফোনে মিথ্যা বলা। কথা ও কাজের ভিন্নতা দেখে শিশু সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে পারে না এবং মিথ্যা বলা শেখে। ‘সোশ্যাল কগনেটিভ থিওরি’ অনুযায়ী এটিকে ‘রোল মডেলিং’ বলে।
* শিশুদের সত্য বলার সাহস জোগানো দরকার। আর এই দায়িত্ব প্রধানত মা-বাবারই। শিশু যখন মিথ্যা বলে, তখন কীভাবে তাকে সত্য বলতে উৎসাহিত করবেন।
* শিশু মিথ্যা বলছে এটি বুঝতে পারলে তাকে বকা না দিয়ে সরাসরি কথা বলুন। কারণ মিথ্যা বলার পেছনে তারও কিছু যুক্তি বা কথা থাকতে পারে। সেগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে এবং মিথ্যা বলা যে খারাপ সেটি ভালোভাবে বোঝান।
* অনেক মা-বাবা বোঝাতে গিয়ে উপদেশের ঝুড়ি খুলে বসেন। শিশুর জায়গা থেকে তাকে বুঝতে চান না। তাঁদের পছন্দ-অপছন্দ চাপিয়ে দেন। এগুলো শিশুর জন্য ক্ষতিকর। শিশুকে তার জায়গা থেকে ‘ইমপ্যাথি’ নিয়ে বোঝান।
* রাগ না দেখিয়ে বন্ধুসুলভ আচরণ করুন।
* শিশুর আবেগ স্পষ্টভাবে বলতে শেখান। যেমন তুমি কেমন আছ? এর উত্তরে ‘আমি ভালো আছি’ শেখানো হয়। এটি না করে সে সত্যিকারে যেমন বোধ করছে, সেটি বলতে শেখান।
* শিশুকে বোঝাতে গিয়ে লজ্জায় না ফেলা; বরং সহজ ও বন্ধুসুলভ আচরণই তাকে সত্য বলার সাহস দেবে।
* শিশুকাল থেকে গল্পের মাধ্যমে সত্যবাদিতা শেখানো। যেটি তার নৈতিকতা ও চরিত্র গঠনে সাহায্য করবে।
গ্রন্থনা: প্রিয়াংকা কুন্ডু

সুত্র প্রথম আলো ৩০/১১/ ২০১৬ আধুনা

0 comments:

Post a Comment