Sunday, May 29, 2016

 নজরুল ইসলামের ছড়া লেখার মজার কাহিনী



তীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছোটবেলা যেমন বৈচিত্রপূর্ণ ছিল তেমনি তার লেখাতে তার প্রভাব আছে। তিনি ছোটদের খুব ভালোবাসতেন। তিনি বলতেন, ওরা আমার ছোট্ট বন্ধু।
ছোটদের জন্য অনেক মজার মজার ছড়া লিখেছেন নজরুল। তিনি পিলে পটকা, খাঁদু-দাদু, মট্কু মাইতি, লিচুচোর আর খুকি ও কাঠবিড়ালীর মতো শিশুতোষ অনেক মজার মজার ছড়া লিখেছেন। ভাবতে গিয়ে অবাক হতে হয় ছোটদের জন্য লেখা প্রায় প্রতিটি ছড়া-কবিতার পেছনেই নজরুলের কোনো না কোনো ক্ষুদে বন্ধুর কাহিনী জড়িয়ে আছে।
কাজী নজরুল ইসলামকে বলা হয় বিদ্রোহী কবি। শাসকরা তাকে ভয় পেতো। তবে ছোটরা ভয় পেতো না। কবি বলতেন, ওরা আমার বন্ধু।

নজরুল ইসলামের একটি বিখ্যাত কবিতা খুকী ও কাঠবেড়ালী। এ কবিতা লেখা নিয়ে মজার একটি ঘটনা আছে। ১৯২১ সালে কুমিল্লায় বেড়াতে এসেছিলেন নজরুল। তিনি উঠেছিলেন ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের বাসায়। তার একটি ফুটফুটে মেয়ে ছিলো। ওর নাম ছিলো অঞ্জলি। একদিন নজরুল দেখতে পান, একটা পেয়ারা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে চোখ নাচিয়ে, হাত-পা নেড়ে অঞ্জলি কারো সঙ্গে কথা বলছে। 
নজরুলের মনে হয়, নিশ্চয়ই কেউ পেয়ারা গাছে উঠেছে। তার কাছে অঞ্জলি কাকুতি-মিনতি করে পেয়ারা চাইছে, কিন্তু সে পেয়ারা দিতে চাইছে না। 
নজরুল ভাবেন অঞ্জলির হয়ে তিনি পেয়ারা চাইবেন। ছেলেটা না দিলে নিজেই পেয়ারা পেড়ে দেবেন। 


অঞ্জলির সামনে গিয়ে নজরুল গাছের ওপর কাউকেই দেখতে পান না। তখন জিজ্ঞেস করেন, তুমি কার সাথে কথা বলছিলে?
অঞ্জলি বলে, ওই দুষ্টু কাঠবেড়ালীটার সাথে। রোজ রোজ দুষ্টুটা পেয়ারা খেয়ে পালিয়ে যায়। আমাকে একটাও খেতে দেয় না।
কাঠবেড়ালীর সঙ্গে অঞ্জলির এই মান-অভিমান নজরুলকে এতোটাই চমত্কৃত করে যে, সেই ঘটনা নিয়ে তিনি লিখে ফেলেন খুকী ও কাঠবেড়ালী:

কাঠবেড়ালী! কাঠবেড়ালী!
পেয়ারা তুমি খাও?
গুড়-মুড়ি খাও! দুধ-ভাত খাও?
বাতাবি লেবু? লাউ?
বেড়াল বাচ্চা? কুকুর ছানা
তাও? 

নজরুলের আরেকটি কবিতা মটকু মাইতি বাঁটকুল রায়। এটা লেখার গল্প আরো মজার। 

নজরুল ইসলাম তখন কলকাতার চিত্পুরে হিন্দুস্তান গ্রামোফোন কোম্পানিতে চাকরি করতেন। সেখানে যাবার সময় প্রতিদিন দুটি ছেলে তার দৃষ্টি কাড়তো। ওরা গলা ধরে হেঁটে হেঁটে স্কুলে যেতো। এদের একজন ছিলো বেঁটে আর মোটাঅন্যজন টিনটিনে শুকনো আর ছিপছিপে লম্বা। অনেকটা তালপাতার সেপাইয়ের মতো।

এ দুজনকে দেখে নজরুল এতোটাই মজা পান যে, একদিন হঠাত্ তিনি লিখেন :

মটকু মাইতি বাঁটকুল রায়
ক্রুদ্ধ হয়ে যুদ্ধে যায়
বেঁটে খাটো নিটপিটে পায়
ছেের চলে কেের চায়
মটকু মাইতি বাঁটকুল রায়।...


কাজী নজরুল ইসলামের আরেকটি শিশুতোষ কবিতার নাম লিচু চোর। এ কবিতাটি লেখার পেছনেও একটি ঘটনা আছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় নজরুল ঊনপঞ্চাশ নম্বর বাঙালি পল্টনে হাবিলদার পদে চাকরি করতেন । বিশ্বযুদ্ধ শেষে নজরুল কলকাতায় চলে আসেন। সে সময় আলী আকবর নামে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তিনি নজরুলকে ছোটদের জন্য লেখা একটি পাণ্ডুলিপি দেখিয়ে মতামত জানতে চান। পাণ্ডুলিপিটি পড়ে নজরুল বলেন, পাণ্ডুলিপির ছড়াগুলো ছোটদের উপযোগী হয়নি। যদি বলেন তো আমি একটা কবিতা লিখে দিই।
আলী আকবরের জন্য এ ছিলো আকাশের চাঁদ হাতে পাবার মতো প্রস্তাব। সঙ্গে সঙ্গে তিনি নজরুলকে একটি কবিতা লিখে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন । নজরুল ইসলামও দুখিলি পান মুখে পুরে লিখে ফেলেন সেই বিখ্যাত লিচু চোরকবিতা। সেই কবিতায় নজরুল লিখেন :

বাবুদের তালপুকুরে
হাবুদের ডালকুকুরে
সেকি ব্যস করলো তাড়া
বলি, থাম-একটু দাঁড়া।
ছড়া কবিতা লেখার পেছনে এমন অনেক ঘটনা জড়িয়ে আছে, যা থেকে বোঝা যায় ছোটদের কতো ভালোবাসতেন কাজী নজরুল ইসলাম।