Saturday, September 3, 2016

সন্তানের অপরাধ দায় কার?



কায়সার সাহেব আর তাঁর স্ত্রী গিয়েছেন একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে। কিন্তু তাঁরা সেখানে উপস্থিত হতেই সবাই কেমন যেন ম্রিয়মাণ হয়ে গেলেন। অন্য অতিথিরা কেউ এগিয়ে এসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন না। খাবার সময় আরও বিপত্তি। তাঁদের টেবিলে কেউ বসছেন না! উল্টো তাঁদের টেবিল থেকে কেউ কেউ উঠে চলে গেলেন। কারণটা হচ্ছে তাঁদের পুত্র পরাগ। পরাগ মাস খানেক আগে একটি চাঞ্চল্যকর অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে। পত্রপত্রিকা, টিভি চ্যানেল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবখানে পরাগ আর পরাগের পরিবারের ছবি প্রকাশিত হয়েছে। পরাগকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। সে এখন পলাতক। কায়সার সাহেব সাংবাদিকদের ডেকে বলেছিলেন তিনি পরাগের কোনো খবর জানেন না, পরাগের সঙ্গে তিনি সব সামাজিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। কিন্তু ঘটনার পর থেকেই পরাগের কারণে তার মা-বাবাকে এ ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
সন্তান যদি কোনো অপরাধ করে তখন নানাভাবে মা-বাবাকে দায়ী করা হয়। বেশির ভাগ সময় এই অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না থেকেও মা-বাবারা সামাজিকভাবে কিছুটা একঘরে হয়ে পড়েন। গণমাধ্যম তাঁদের নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ পরিবেশন করে। মনোসামাজিক বিশ্লেষকেরা সন্তানের অপরাধের দায়ে মা-বাবাকেও দায়ী করে ফেলেন। একদিকে সন্তানের অপরাধের কারণে তাঁরা বিব্রত-লজ্জিত, প্রিয় সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর শাস্তি নিয়ে তাঁরা শঙ্কিত। অন্যদিকে আশপাশের মানুষ যখন তাঁদের এড়িয়ে চলছেন, তখন তাঁরা মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত। অপরাধী যেই হোক তার অপরাধের মূল দায়টুকু তারই। কারও অপরাধের কার্যকারণ খুঁজে বিশ্লেষণ করা বা অপরাধী হওয়ার পথ খুঁজে দেখা বিশেষজ্ঞের দায়িত্ব। সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি কিন্তু এই ভূমিকা নিতে পারেন না। কারও সন্তান মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে বা মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়েছে, কারও সন্তান স্ত্রী নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত, অনৈতিক অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়েছে, হত্যা মামলার আসামি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে—সে ক্ষেত্রে সেই পরিবারের চারপাশের মানুষেরা প্রায় সব সময় বিচারিক দায়িত্ব পালন করে ফেলে।
বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের তোয়াক্কা না করে ‘বাবার জন্যই ছেলের এই অবস্থা;’ ‘মায়ের চালচলনের জন্যই মেয়ের এই পরিণতি’ অথবা ‘যেমন বাবা-মা তেমন সন্তান’—এই ধরনের সরলীকরণ করে ফেলেন কেউ কেউ। হ্যাঁ সন্তানের বেড়ে ওঠায়, তার মনোজগৎ তৈরিতে, তার নৈতিকতার শিক্ষায় মা-বাবা বা পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম কিন্তু পরিবারই একমাত্র বিষয় নয়। একটি সুসংগঠিত পরিবার সন্তানের আদর্শ মনোজগৎ গড়ে তুলতে পারে কিন্তু কখনো কখনো পরিবারকে ছাপিয়ে পরিবেশ আর সমবয়সীদের প্রভাব (পিয়ার প্রেশার) সেই আদর্শ মনোজগৎ তৈরিতে বিপত্তি তৈরি করতে পারে। ফলে ঢালাও আর এককভাবে পরিবারকে দায়ী করা যাবে না। একটা সাধারণ ধ্রুব সত্য বিশ্বাস করতে হবে যে মা-বাবা কখনোই সন্তানের অমঙ্গল চান না। কখনো তাঁদের ভালো করতে চাওয়ার প্রক্রিয়ায় ভুল থাকার কারণে সন্তান বিপথগামী হতে পারে। আবার সঙ্গদোষে সে জড়িয়ে পড়তে পারে অপরাধে, কোনো মানসিক সমস্যার কারণে সন্তানের মনোবিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি কোনো বিশেষ গোষ্ঠী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই কোমলমতি তরুণদের মধ্যে অন্ধকারের বীজ রোপণ করে দিতে পারে।
সন্তান যখন এমন কোনো একটি অন্ধকারের পথে নিরুদ্দেশ যাত্রা শুরু করে একসময় তা সবার গোচরে চলে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সংবাদকর্মী, স্বজন, প্রতিবেশী, সাধারণ মানুষ সবাই তখন বিষয়টি নিয়ে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো শুরু করে দেয়। এ সময় মা-বাবারা একধরনের তীব্র মানসিক চাপের মুখোমুখি হন। এই চাপ পরে দীর্ঘমেয়াদি হলে মা-বাবার মধ্যে উদ্বিগ্নতা, হতাশা, বিষণ্নতা, অস্বাভাবিক আচরণসহ নানা মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই অবস্থা থেকে বের হতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। মনে রাখবেন প্রত্যেকের অপরাধ স্বতন্ত্র। মা-বাবা যদি প্রত্যক্ষভাবে সন্তানের অপরাধের সঙ্গে জড়িত না থাকেন, তবে কোনোভাবেই তাঁদের দায়ী করা যাবে না। আর সন্তান এবং মা-বাবার মধ্যে যে বন্ধন থাকে তা অপার্থিব। সন্তানের অপরাধ তা যতই গুরুতর হোক, কোনোভাবেই এই বন্ধনকে ছিন্ন করতে পারে না।
কী হয় মা-বাবার মনে
* প্রথমেই তাঁদের মনে সন্তানের জন্য উদ্বিগ্নতা আর দুশ্চিন্তা আসে। তাঁর সন্তান গ্রেপ্তার হবে কি না? গ্রেপ্তার হলে তার অপরাধের সাজা কী হবে? সে এখন কোথায় আছে, কেমন আছে? এগুলো সব মা-বাবার চিরায়ত চিন্তা। এই চিন্তায় তাঁদের ঘুম হয় না, খাওয়া হয় না, দৈনন্দিন জীবন বাধাগ্রস্ত হয়।
* অপরাধ করার সময় সন্তানের অপমৃত্যুও হতে পারে কখনো। সে ক্ষেত্রে মা-বাবার মধ্যে শোক আর লজ্জার মিশ্র আবেগ তৈরি হয়। এই তীব্র আবেগের চাপে তাঁদের কারও কারও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
* সন্তানের অপকর্মের জন্য তাঁরা বিব্রত আর লজ্জিত বোধ করেন। কখনো নিজেদের দায়ী করেন। তাঁদের মধ্যে একধরনের হীনম্মন্যতা আর অপরাধ বোধের জন্ম হয়।
* তাঁদের মধ্যে একধরনের ‘অস্বীকৃতি’ (ডিনায়েল) পর্যায় শুরু হয়। এটি দুভাবে হতে পারে। কখনো তাঁরা সন্তানের অপরাধকে স্বীকার করেন না কিংবা সন্তান এ ধরনের অপরাধ করতে পারে তা বিশ্বাস করেন না, শত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাঁরা সবকিছুকে ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন। আবার কারও মধ্যে অপরাধটি মেনে নিয়ে সন্তানকেই অস্বীকার করা শুরু করার প্রবণতা দেখা যায়। সন্তানের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেন। এমনকি সন্তানের মৃত্যু হলেও প্রথাগত পারলৌকিক নিয়ম ও দায়িত্ব পালন করা থেকে বিরত থাকেন।
* আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জেরা, সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর আর আশপাশের মানুষের আচরণের কারণে তাঁরা নিজেদের অপরাধী ভাবা শুরু করেন। সবকিছু থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন। চরম মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে যান কেউ কেউ।
* এই পরিস্থিতিতে কোনো কোনো মা-বাবার মধ্যে আচরণের পরিবর্তন দেখা দেয়। তাঁদের মধ্যে অতি উৎফুল্লতা বা অতি বিষাদ হতে পারে। অস্বাভাবিক কথা আর কাজ করেন। বিনা কারণে রেগে যান। কখনো মৃত্যুচিন্তা তাঁদের আচ্ছন্ন করে ফেলে।
মা-বাবারা কী করবেন
* সন্তানের অপরাধের জন্য নিজেদের দায়ী করবেন না। আপনার উদ্দেশ্য যদি অশুভ হয়ে না থাকে তবে সন্তানের কৃত অপরাধের জন্য নিজেকে দোষী ভাববেন না।
* পরস্পরকে দায়ী করা যাবে না, মা বাবাকে দায়ী করেন আবার কখনো বাবা মাকে। এই পারস্পরিক দায়ী করার প্রবণতা সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
* স্বজন, বন্ধু আর প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন। আপনি একটি বিপদে পড়েছেন। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য তাদের পরামর্শ আর সাহায্য চান। এ কারণে তারা আপনার সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকবে।
* আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাহায্য করুন। এতে আপনার সন্তানের হয়রানি ও শাস্তি কম হবে। এমনকি তার জীবনও রক্ষা পেতে পারে।
* জীবনযাপনে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুন। সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নিন। অপরের বিরূপ আচরণ বা অবহেলাকে গুরুত্ব না দিয়ে আপনি নিজে সামাজিক হওয়ার চেষ্টা করুন।
* আবেগ, চিন্তা আর আচরণের পরিবর্তনগুলো নিজেরা মোকাবিলা করতে না পারলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
আশপাশের মানুষ যা করবেন
বিচারিক দায়িত্ব পালন করবেন না। অপরাধী বা অভিযুক্ত ব্যক্তির মা-বাবার প্রতি সমমর্মী হন, তাঁদের প্রতি প্রকাশ্যে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য করবেন না। নিজের আবেগ দিয়ে পরিচালিত না হয়ে, স্রোতে গা না ভাসিয়ে বিষয়টিকে যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন।
প্রত্যেকে তাঁর অপরাধের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী। এটা বিশ্বাস করে অপরাধীর মা-বাবাকে দায়ী করবেন না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সংবাদকর্মীরা অভিযুক্তের মা-বাবার জেরা বা সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় সংবেদনশীল হন। মনে রাখবেন এই মা-বাবা এই মুহূর্তে একটি খুব খারাপ সময় পার করছেন, তাঁরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাঁদের প্রতি মানবিক আচরণ করুন, এই মানবিক আচরণ প্রকৃত সত্য আর তথ্য উদ্ঘাটনে সহায়ক হবে।
স্বজন প্রতিবেশীরা ভয় পেয়ে দূরে সরে যাবেন না, এই ঘটনা যে কারও জীবনে যখন-তখন ঘটতে পারে। এটা ভেবে আপনার কাছের মানুষ, যিনি তাঁর সন্তানের অপরাধের কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তার সাহায্যে এগিয়ে আসুন।
অভিযুক্ত সন্তানের মৃত্যু হলে পারলৌকিক আচার-অনুষ্ঠান পালনে মা-বাবাকে উদ্বুদ্ধ করুন। এ বিষয়ে সৎ পরামর্শ দিন।
সুত্র প্রথম আলো আহমেদ হেলাল | আপডেট: 
আহমেদ হেলাল : সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

শিশুকে বুঝিয়ে বলুন





তিন বছরের শিশু আরিয়া। আরিয়া শান্ত স্বভাবের। কিন্তু মাঝেমধ্যেই হুট করে তার জেদ চেপে যায়। বিশেষ করে, শপিং মলে গিয়ে পছন্দের কোনো খেলনা কিনে না দিলেই এই জেদ আরও চেপে যায়। সবার সামনেই কান্নাকাটি করে এক হুলুস্থুল কাণ্ড বাধিয়ে ফেলে। অগত্যা মেয়েকে শান্ত করার জন্য পছন্দের খেলনাটা কিনে দিতেই হয় মা-বাবাকে।
একই রকম অবস্থা পাঁচ বছরের রাফানের ক্ষেত্রেও। প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে রাফান। বন্ধুদের কাছে নিত্যনতুন জিনিস দেখে প্রতিদিনই বিভিন্ন বায়না করে সে। সেই বায়না পূরণ না করা মানেই আরেক হুলুস্থুল ব্যাপার। ঝামেলা এড়াতেই মা-বাবা পূরণ করে দেন প্রতিটি বায়না।
এ রকম সমস্যা শুধু আরিয়া কিংবা রাফানের মা-বাবার ক্ষেত্রেই হচ্ছে না। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, অধিকাংশ শিশুর মা-বাবাই এই সমস্যাটির মধ্য দিয়ে যান। শিশুর হাসি মুখের কথা চিন্তা করেই তাঁরা পূরণ করে দেন প্রতিটি আবদার। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কি যে এর ফলে আপনার শিশুটি একরোখা, জেদি হয়ে যাচ্ছে নাকি? কিংবা বড় হলেও এর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব আপনার সন্তানটির মধ্যে পড়বে কি না?

শিশুরা কেন জেদ করে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের কাউন্সেলর মরিয়ম সুলতানা মনে করেন, জেদ কিংবা অতিরিক্ত রাগ শিশুদের একধরনের সহজাত বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মতো শিশুদেরও বিভিন্ন আবেগ রয়েছে। আর নাজুক মনের ছোট এই মানুষেরা নিজেদের আবেগকে সামলিয়ে উঠতে পারে না। এটাই স্বাভাবিক। আর তাই তাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বটা কিন্তু পরিবারের।

সব শিশুর প্রকৃতি একই রকম নয়। প্রতিটি মানব শিশুই যার যার মতো আলাদা। সাধারণভাবে তিন ধরনের মানসিকতার শিশু দেখা যায়। ‘একরোখা শিশু’, ‘একরোখা ও শান্ত মিশেলের শিশু’ এবং ‘শান্ত ধরনের শিশু’। ১০-১৫ শতাংশ শিশু একরোখা কিংবা ডিফিকাল্ট চাইল্ড ধরনের হয়ে থাকে। আর এ ধরনের শিশুদের জেদ থাকে বড্ড বেশি।
তাই এই খুদে নাজুক মানুষগুলোর জন্যও চাই ঠিকমতো পরিচর্যা। শুধু আবদার পূরণ করা মানেই সঠিক উপায়ে শিশুকে পরিচর্যা করা নয়। কখনো মা-বাবাকে হতে হবে স্নেহশীল আবার কখনো তাঁদের হতে হবে কঠোর। তাই বলে কি শিশুকে শাসনে রাখতে হবে? মোটেই তা নয়। বরং মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এমন শাসনের ফলে শিশুর জেদ আরও বেড়ে যেতে পারে। তাহলে কী করা যেতে পারে?
শিশুর জন্য সঠিক মানসিক পরিচর্যা
* অতিরিক্ত শাসন কিংবা অতিরিক্ত প্রশ্রয় কোনোটাই ঠিক নয়। পরিবর্তে শিশুকে বুঝিয়ে বলুন। তাকে বোঝাতে পারেন যে সে এখন বড় হচ্ছে এবং এমন আচরণ তার জন্য শোভনীয় নয়। এবং মা-বাবার সামর্থ্যের বাইরে সবকিছু দেওয়া সম্ভব নয়, এটা এখন থেকেই বোঝানো উচিত। এর ফলে বড় হয়ে শিশুর মধ্যে একধরনের দায়িত্বশীলতা তৈরি হবে।
* একরোখা শিশুদের সামলানো একটু কষ্টসাধ্যই বটে। এই ধরনের শিশুদের ক্ষেত্রে কিছু জিনিস উপেক্ষা করে যাওয়াই ভালো। যেমন, শিশু যদি কোনো কথা না শুনে তাহলে তাকে সময় দিন। বারবার একই কথা বললে উল্টো তার মধ্যে সেই কাজটি করার প্রবণতাই বেড়ে যাবে। তাই বারবার একই নির্দেশ না দিয়ে কিছু আচরণ উপেক্ষা করুন।
* শিশুর ভালো কাজের জন্য তার প্রশংসা করুন। শিশু যদি আপনার কথামতো কাজটি করে থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই বলুন যে এমন কাজটির জন্য আপনি কতটা খুশি।
* ছোট বয়স থেকেই শিশুকে আদবকায়দা এবং বিভিন্ন নৈতিকতা শিক্ষা দিন। শুধু পড়াশোনার প্রতি নজর রাখার মানেই এই নয় যে শিশুর সব দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তাকে অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা দিন।
* শিশুকে তার সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে দিন। এর ফলে শিশুর সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া ঠিকমতো গড়ে ওঠে।
* শিশু যা বলে সেগুলো মন দিয়ে শুনুন। তাকে কোনোমতেই অবহেলা করবেন না। শিশুরা খুব সংবেদনশীল হয়ে থাকে, আপনার এমন আচরণে তার মনঃক্ষুণ্ন হতে পারে। কথায় কথায় শিশুর আগ্রহ, পড়াশোনা বিষয়ে জেনে নিন। আপনিও আপনার কিছু বিষয় তার সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। যেমন, আপনার নিজের শৈশবের কোনো ঘটনা। কিংবা হতে পারে বাল্যকালের কোনো বন্ধুর কথা। এর ফলে শিশুর যোগাযোগের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং আপনাদের মাঝে ভালো সম্পর্কও বজায় থাকবে।
* শিশুর শিক্ষক কিংবা মেন্টরের সঙ্গে মাসে একবার হলেও কথা বলুন। এর ফলে আপনার শিশুর সম্পর্কে আপনি জেনে নিতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী তার পরিচর্যাও নিতে পারবেন।
এবার তাহলে শিশুকে নিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন!
সুত্র প্রথম আলো নাদিয়া নাহরিন | আপডেট: